কাটমানি
– শক্তি পুরকাইত
‘অকালে ভাতারের মাথাটা খেয়েছিস, এবার নিজের মেয়েটার মাথাটা খা, বারবার করে বললুম ওই লোকটার সাথে অত পিরিত করিস না, বুঝবি রে সময় হোক!’ উঠোন ঝাঁট দিতে দিতে শাশুড়ির কথাগুলো শুনছিল মহুয়া। একবছর হল স্বামী নেই। মেয়েটা আট মাসের পেটে। সারা দিনটা মদ খেয়ে এসে মারধোর। বউ প্রতিবাদ করায় গলায় দড়ি দিয়ে মরেছে। সেই থেকে শাশুড়ির এত লাঞ্ছনা- গঞ্জনা শুনতে হয় মহুয়াকে। ঝাঁট দেওয়া থামিয়ে, মহুয়া শাশুড়িকে বলে- মা একটু চুপ করবে? এ সব শুনতে চাই না!
– কেন রে মুখপুড়ি সত্যি কথা বলছি গায়ে ফোসকা পড়ছে, থাক থাক! শাশুড়ি বিড় বিড় করতে করতে ঘাটের দিকে যায়। মহুয়া ভেজা কাঠগুলো রোদে দিয়ে উনান ধরায়। পিছনে দাঁড়িয়ে আভাষপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিজন ঠাকুর। তাকে অনেকে বিজন প্রধান বলে চেনে। গ্রামের গন্যমান্য লোক। তাই অন্যায় করলেও কেউ কিছু বলে না। সদ্য বিধবা মহুয়া পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে দাঁড়িয়ে বিজন ঠাকুর। অঞ্চল থেকে এ বছর মহুয়াও ইন্দিরা আবাস যোজনার ঘর পেয়েছে। কিছুটা ইট গাঁথলেও পুরোপুরি তুলতে পারেনি। আরও কিছু টাকার দরকার। সে প্রধানকে বলেছিল কিন্তু রাজি হয়নি। মহুয়ার যৌবনের প্রতি লোভ তার সে নিজেও জানে। আজ হঠাৎ স্বয়ং প্রধান সাহেব নিজেই হাজির। সে বসতে বলে। বিজন ঠাকুর শুধু একটা কথা বলে চলে যায় ‘রাতে আসবে কথা আছে ..’ মেয়েকে বিছানায় ঘুম পাড়িয়ে, মহুয়া দরজা খুলে বাইরে বের হয়। শ্রাবণের আকাশ কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হওয়ায় পথঘাট শুনশান। সে দেখল গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে বিজন ঠাকুর। চাঁদের আলোয় সামান্য মুখ দেখা গেলেও পুরোপুরি নয়। মহুয়া কাছে আসতেই বিজন ঠাকুর লোভ সামলাতে না পেরে জড়িয়ে ধরে। সে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে। তাকে হুমকি দেয় এ কথা বলে দিলে প্রাণে মেরে ফেলবে। সেই জন্যে চুপ করে থাকে মহুয়া। মৃত্যুর ভয় আর মেয়েকে বাঁচানোর আকুতি। তাকে চুপ করে থাকতে হয়। বিজন ঠাকুর বিবস্ত্র মহুয়ার উপর হিংস্র বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে। দূর থেকে মেয়ের কান্নার শব্দ শুনতে পায় সে। মাটি থেকে উঠে দাঁড়াবার শক্তি নেই। কোনরকমে টলতে টলতে বাড়ি আসে। সকাল হলে গ্রামের মানুষের কাছে মুখ দেখাবে কী করে! ইন্দিরা আবাস যোজনার টাকা দিতে না পেরে শেষে নিজের ইজ্জত দিয়ে কাটমানি দিল বিজন ঠাকুরকে। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, এ মুখ আর কাউকে দেখাবে না! ঘরের দরজা খুলে মেয়েকে বুকে নিয়ে গ্রামের ভিতর দিয়ে অন্ধকারে ছুটে চলল, মহুয়া।